নমস্কার বন্ধুরা, সমাধান অনুষ্ঠানে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই। আশাকরি আপনারা সবাই খুব ভালো আছেন। দীপাবলি বা দেওয়ালি কী ?,বঙ্গদেশে দীপাবলী, কালীপুজোয় তারাপীঠে মা তারা – ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের অনুষ্ঠান- দীপাবলি কালী পূজা
আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ আপনারা ভিডিওটি পুরোটা দেখুন , যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই লাইক করুন, শেয়ার করুন। আমাদের চ্যানেলে নতুন হলে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন ও নতুন সব ভিডিওর তারা তারি নোটিফিকেশন পেতে বেল আইকন টিকে প্রেস করে রাখুন।
চলে আসছি মূল আলোচনায়।
দীপাবলি :–

দীপাবলি বা দেওয়ালি হল একটি পাঁচ দিন-ব্যাপী হিন্দু উৎসব। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়। হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এইসময় হিন্দুরা বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

“দীপাবলি” নামটির অর্থ “প্রদীপের সমষ্টি”। এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়। দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পরা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।

ধনতেরসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে নরক চতুর্দশী। তৃতীয় দিন অমাবস্যায় লক্ষ্মীর পূজা হয়। এই দিন পশ্চিমবঙ্গে কালীপূজা হয়। চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ। এই দিন বৈষ্ণবরা গোবর্ধন পূজা করেন। পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।

এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন বলে, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়; কেউবা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়; একে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় আকাশপ্রদীপ। দীপাবলি মানে আলোর উৎসব।

বঙ্গদেশে দীপাবলীতে কালী পূজা হয়। অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয় ।

রামায়ণ অনুসারে দীপাবলী দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্য জুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে শব্দবাজি করে। অনেকে মনে করেন দীপাবলীর আলোকসজ্জা এবং শব্দবাজি ত্রেতাযুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অন্যসব অঞ্চলে প্রচলিত হয়েছে, পরিচিত হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে।

দীপাবলী মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব। কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা। পরের দিনের চতুর্দশীকে বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী’, দীপাবলির দ্বিতীয় দিন। চতুর্দশীর পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলীর তৃতীয় দিন হলেও এই দিনটিই দীপাবলী উৎসবের মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন। তাছাড়া এই দিনে লক্ষীপূজাও করা হয়, কথিত আছে এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরধাত্রী রূপে ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করেন। বিষ্ণুপুরান মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান; দীপাবলী দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুদ অযুদ প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দীপাবলীর চতুর্থ দিন- কার্তিকা শুদ্ধ; এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে। পঞ্চম দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া; একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়; এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, কপালে ফোঁটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়। এই দিনে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।

প্রত্যেক সার্বজনীন আনন্দের উৎসব, মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমঃকে দীপ শিখায় বিদূরিত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।

কালীপুজোয় তারাপীঠে মা তারা ‘তারা অঙ্গে কালী’রূপে পূজিত হন :–
স্বয়ং মা তারার অবস্থান যেহেতু তারাপীঠে, তাই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় কেউই মূর্তি গড়ে দুর্গা বা কালীর আরাধনা করেন না। বারোয়ারি প্রচলনও নেই। কালীপুজোয় মা তারা ‘তারা অঙ্গে কালী’ রূপে পূজিত হন। রত্নালঙ্কার ও সহস্র প্রদীপের আলোয় সজ্জিত করে তারা মা-কে কালী রূপে নিশিপুজো করা হয়। পাঁচরকম ভাজা, খিচুড়ি, মিষ্টি, কারণ মা-কে নিবেদন করা হয়। তারা মা-কে কালী রূপে পুজো দিতে ভক্তদের দেওয়া রত্নালঙ্কারের সাজিয়ে তোলা হয়। কার্যত সব অলঙ্কারই বছরের একদিন মা-কে পরানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে মায়ের বিশালাকার সোনার মুকুট, সাত নলা হার প্রভৃতি। দীপাবলি তথা ধনতেরস উপলক্ষে মা-কে সব অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাতে অমাবস্যা। রাত বারোটায় তারা মায়ের মন্দিরে নিশিপুজো শুরু হবে। তার আগে মা-কে রাজবেশে সাজিয়ে তোলা হবে। আলু, পটল, বেগুন, ঢেঁড়শ ও উচ্ছে ভাজা মাকে নিবেদন করা হয়। পাশাপাশি পাঁচরকম মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। মায়ের প্রিয় শোল মাছ পোড়া দেওয়া হবে। মহাকাল ভৈরবের খিচুড়ি প্রসাদও নিবেদন করা হয়। বলির মাংস ও কারণ মা-কে নিবেদন করেন সেবাইতরা।

অত্যাধুনিক আলোকসজ্জার পাশাপাশি সেবাইত বাড়ির মেয়েরা প্রাচীন রীতি মেনে মাটির প্রদীপ দিয়ে মন্দির চত্বর সাজিয়ে তুলবেন, যা এখানকার অন্যতম বড় আকর্ষণ। পুরো মন্দির চত্বর সহস্র প্রদীপের আলোয় সাজানো হবে।

এইদিন ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমাগমে তারাপীঠ মন্দির ভরে ওঠে। সকলে আলোর উৎসবে মেতে ওঠেন। মহাশ্মশান থেকে শুরু করে মন্দির লাগোয়া লজ বা হোটেল সবই সেজে ওঠে আলোকমালায়।

প্রিয় বন্ধুরা আজকের অনুষ্ঠান এপর্যন্তই। খুব তারা তারি ফিরে আসবো নতুন কোনো অজানা তথ্যের ভিডিও নিয়ে। সকলে ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ,দীপাবলী কালী পূজায় খুব আনন্দ করুন আর দেখতে থাকুন আমাদের চ্যানেল সমাধান।
.

শুভ দীপাবলি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *